 
                    সত্যের জয়,তার সাথে দীর্ঘদিনের জমে থাকা কিছু কথা: ব্যারিস্টার মীর হেলাল
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট : চট্টগ্রাম হাটহাজারী ৫ সংসদীয় আসনের বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপির দুঃসময়ের কান্ডারী ব্যারিস্টার মীর হেলাল তার ভেরিফাই ফেইসবুক আইডিতে লিখেন, দীর্ঘ ১৮ বছর পর দুদকের মামলায় দণ্ড থেকে আপীল বিভাগ থেকে খালাস পেলাম আমার বাবা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন এবং আমি।
২০০৭ সালে অবৈধ মইনউদ্দিন ফখরুদ্দিন এর শাসনামলে তৎকালীন অবৈধ দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মিথ্যা মামলা দিয়ে যখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইবিএনজি দেশনায়ক তারেক রহমান সহ সকল দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননের জন্য কোন সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করা শুরু হয় তখন আমরা বাসা থেকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের পর কারাবন্দী অবস্থায়ই ২০০৭ সালের ৬ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে আব্বা ও আমার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দুদক এই মিথ্যা বানোয়াট মামলা করে।
পরবর্তীতে কোন সাক্ষ্য প্রমাণের তোয়াক্কা না করে কোন আইনিভাবে মোকাবেলার সুযোগ না দিয়ে মামলা দায়েরের এক ২ মাসের মধ্যেই অবৈধ এই দুদকের মামলায় আব্বাকে ১৩ বছর ও আমাকে ৩ বছরের সাজা দেয় ঐ ক্যাঙ্গারু কোর্ট।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে পৃথক দুটি আপিল করি।
হাইকোর্ট ২০১০ সালের ১০ আগস্ট আব্বা এবং একই বছরের ২ আগস্ট আমার সাজা বাতিল করে রায় দেন।
হাইকোর্টের ওই রায় বাতিল চেয়ে দুদক আপিল আবেদন করে, যদিও আমাদের একই সময়ে বাতিল হওয়া আওয়ামিলীগের সকল নেতার সাজা বাতিলের বিরুদ্ধে সোল করেনি তৎকালীন অবৈধ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও তার লেসপেন্সার দুদকের তৎকালীন প্রধান কৌশলী খোরশেদ আলম খান।
২০১৪ সালের ৪ জুলাই দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে রায় দেন আপিল বিভাগ।
রায়ে আব্বা ও আমাকে দুর্নীতি মামলায় খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করা হয়।
একইসঙ্গে মামলা দুটির আপিল আবেদন পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়।
সে অনুসারে এর আগে আপিল বিভাগের আদেশে এই মামলায় পুনরায় শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর রায় দেন এবং তৎকালীন অবৈধ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও তার লেসপেন্সার দুদকের তৎকালীন প্রধান কৌশলী খোরশেদ আলম খান প্রত্যক্ষ নির্দেশে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে কোন আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে অবৈধ ও বেআইনীভাবে ১/১১ ক্যাঙ্গারু কোর্ট খ্যাত বিশেষ জজ আদালতের জজ এ কে রায় এর অবৈধ রায় ও সাজা বহাল রাখে।
সে রায়ের পর পালিয়ে না গিয়ে আওয়ামীলীগের অবৈধ শাসনামলেই আমি আর আব্বাআত্মসমর্পণ করে লিভ টু আপিল দায়ের করি আব্বা ও আমি বিভিন্ন মেয়াদে কারাবরণ করে আদালতের মাধ্যমেই জামিনে মুক্ত হই।
৫ই আগস্টের গণ অভুত্থানের পরবর্তিতে আমরা স্বাধীন বিচার বিভাগে আমাদের লিভ তো আপিলের শুনানি করি এবং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আমাদের দুইজনেরই আপিল গ্রহণ করে ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ হাইকোর্টের অবৈধ রায় স্থগিত করে দেন।
আজ ২০২৫ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর আপিলের পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে হাইকোর্টের দেওয়া তিন বছরের দণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) মহামান্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ রায় দেন।
আদালতে আমাদের আবেদনের পক্ষে ছিলেন আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় বড় ভাই, সিনিয়র আইনজীবী রাগিব রউফ চৌধুরী, যিনি শুরু থেকে নিজের মামলা মনে করেই এই আপিল দুটির জন্য অমানবিক পরিশ্রম করছেন এবং এক কাপ চা খাওয়াতে দেন নি আজ পর্যন্ত। আমরা রাগিব ভাইয়ের কাছে চির ঋণী।
২০০৭ সালে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার হওয়ার পর ৪ দিন কোথায় রেখেছে জানি না, এরপর গুলশান থানা হিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানা এরপর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট হয়ে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে। কারাবন্দী ছিলাম এক টানা ১৭ মাস। এরপর আবার ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে আবার নিজে নিম্ন আদালতে সারেন্ডার করি এবং আবারও কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে আবার কারাভোগ করি।
আল্লাহ মহান, শত ষড়যন্ত্র, অন্যায়, অবিচার, অপমান, নির্যাতন ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, শুধু আমার নয়, আমার পুরো পরিবারের। আমাদের প্রথম সন্তান মীর হামজার জন্ম হয় আমি কারাবন্দী থাকা অবস্থায়, ১লা জুন ২০০৭। প্রথম সন্তানের জন্ম সব মা বাবার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়, যার থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। এরপর কাছের দূরের অনেক মানুষই পিছনে পিছনে উপহাস করেছে, তাচ্ছিল্য করেছে কিন্তু এখন ব্যক্তি এবং উনার সহধর্মিণী আমাকে এবং সহধর্মিণীকে প্রচণ্ড রকম সাপোর্ট দিয়েছেন এবং মানসিক শক্তি জুগিয়েছেন। উনারা হলেন আমার শিক্ষক, আমার অভিভাবক এবং আমার নেতা জনাব তারেক রহমান এবং উনার সহধর্মিনী বিশিষ্ঠ কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ জুবাইদা রহমান। আমি গ্রেফতার হওয়ার পর আমার স্ত্রীর খোঁজ নিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন ডাঃ জুবাইদা রহমান। এবং কারান্তরীণ থাকা অবস্হায় প্রতিটি দিন মোটিভেটেড রেখেছেন, সাহস জুগিয়েছেন এবং অনুপ্রাণিত করেছেন আমার নেতা জনাব তারেক রহমান। আমি সৌভাগ্যবান উনাদের ছায়া, স্নেহ এখনও আছে আমাদের উপর। ২০০৭ সালে আমার কারামুক্তির ব্যাপারে মায়ের মতো ভূমিকা রেখেছেন আমাদের মাতৃতুল্য নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আমরা চির কৃতজ্ঞ।
আমার অবর্তমানে আমার শাশুড়ি আমার ছেলে এবং আমার সহধর্মিণীকে আগলে রেখেছেন, মা হিসেবে উনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি না কিন্তু উনার এই অবদান আমার মাথার উপর থাকবে আমৃত্যু। আমার সম্মন্ধি চট্টগ্রামের অতিহ্যবাহী মরহুম সোলায়মান চৌধুরীর পৌত্ৰ জনাব সাব্বির সুলায়মান চৌধুরী সম্বন্ধীর চেয়ে বেশি আপন বড় ভাইয়ের মতো ছিলেন পাশে পুরোটি সময়। উনার প্রতিও রইলো আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
আল্লাহ আজ ১৮ বছর পর আমাদেরকে চুড়ান্ত মুক্তি দান করেছেন এই জন্যে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারের লাখো শোকর।
নীতিতে অটল ছিলাম, মিথ্যার কাছে, অন্যায়ের সামনে কখনো মাথা নত করিনি, ভয়ে বা নিরাপদে থাকার জন্যে পালিয়ে যাইনি দেশ ছেড়ে, আল্লাহ এর প্রতিদান দিয়েছেন।
আমার প্রাণপ্রিয় চট্টগ্রামবাসী বিশেষ করে হাটহাজারী ইবিএনজি বায়েজিদ বাসি আমাকে তাদের ছেলে হিসেবে আগলে রেখেছেন এতদিন ধরে। আমি কৃতজ্ঞ উনাদের কাছে এবং আবারো বলি আমি সৌভাগ্যবান আলহামদুলিল্লাহ এতো মানুষের ভালবাসা-সাপোর্ট-পেয়েছি, পাচ্ছি নিঃস্বার্থ ভাবে।
সবশেষে আমার জীবন যুদ্ধের সাথী, আমার সকল দুঃখ কষ্ট দুর্যোগে যে আমাকে সব সময় সাহস জুগিয়েছে, যে আমাকে আগলে রেখেছে, যে আমাকে সব সময় কাউন্সেলিং করে হতাশ হতে দেয় নাই, আমার দীর্ঘ কারাজীবনে যে আমার পুরো পরিবারকে আগলে রেখেছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, আমার গাইড, আমার মাচ বেটার হাফ আমার সহধর্মিনী নওশীনের কথা না লিখলেই নয়। You’re not my weakness, but my strength. তুমি আমার দুর্বলতা নও, তবে তুমি আমার শক্তি।
অনেক সংগ্রাম করে, পরিশ্রম করে, জীবন যুদ্ধে হার না মেনে, স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছি, আলহামদুলিল্লাহ।
কখনো হতাশা, বা নেগেটিভিটিকে স্থান দেইনি, সব সমালোচনা, কটূক্তির জবাব একমাত্র কর্মের মাধ্যমেই দেয়ার চেষ্টা করেছি। সাধ্যমতো মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। আল্লাহ দয়ায় রেখেছেন আমাদেরকে।আলহাদুলিল্লাহ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।
(মীর হেলাল উদ্দিন এর ফেইসবুক আইডি থেকে সংগ্রীহিত। ০৪/০৯/২০২৫ ইং)
 
               
                     
                     
                     
                     
                     
                     
                     
                     
                     
                 
                 
                 
                